কুষ্টিয়ায় চাঁদা না পেয়ে যুবক কে ৯ খন্ড করেন কিশোরগ্যাং প্রধান-এস কে সজিব টাকার দাবিতে বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা,বর্তমান স্বেচ্ছাসেবকলীগ করতো, সজিবের নেতৃত্বে খুন,চার স্থান থেকে যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার


আব্দুস সবুর ঢাকা: রাতভর সাঁড়াশি অভিযানের পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পদ্মা নদীর চর থেকে এক যুবকের নয় খন্ড লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।লাশের নয়টি খণ্ড পৃথক ছয় জায়গায় পুঁতে রাখা হয়েছিল।শনিবার(০৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২ টা থেকে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর সকালে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ সংলগ্ন পদ্মার চর থেকে লাশের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়।নিহত যুবকের নাম মিলন হোসেন (২৪)।তিনি দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহিরমাদী গ্রামের মাওলা বক্সের ছেলে।তিনি পরিবার(স্ত্রীকে)নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লকের ভাড়া বাসায় থাকতেন।কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ জানান,৩১ জানুয়ারি(বুধবার)সকালে মিলন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মুমো খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।মুঠোফোনের একটি কল লিস্টের সূত্রধরে প্রথমে মিলনের এক বন্ধুকে আটক করা হয়।তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায় আরেকবন্ধু সজিবের নেতৃত্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে সজিবসহ আরো চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো করে নদীর চরে পুতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে।এরপর শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাদেরকে নিয়ে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ পদ্মা নদীর চরে অভিযানে যায় পুলিশ। রাতভর অভিযান চালিয়ে নদীর চরের ছয়টি স্থান থেকে মিলনের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বাঁধ বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে,টাকার দাবিতে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতরা সবাই একে অপরের পরিচিত। মিলন বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতো। নিখোঁজের দিন তাকে মুঠোফোনে ডেকে হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ঐদিন রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করার সুবিধার্থে ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীর চরে পুতে রাখা হয়েছিল।আর এই পুরো হত্যাকান্ডটির নেতৃত্ব দিয়েছে তারই বন্ধু সজিব।এর সাথে অন্যকোন ঘটনা আছে কিনা তা নিয়ে আরো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাউজিং এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে,সজিবের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে।তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হয়। মিলন নামে যাকে হত্যা করা হয়েছে সেও তাদের মতোই ছিল।উল্লেখিত অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন,কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(পদোন্নতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার)(ক্রাইম এন্ড অপস্)পলাশ কান্তি নাথ,কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সোহেল রানা সহ সঙ্গীয় ফোর্স,অফিসার ইনচার্জ কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা শাখা চৌধুরী মাহফুজুল হক চৌধুরী(পিপিএম) সহ সঙ্গীয় ফোর্স,সাথে ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার গণমাধ্যম কর্মীগন।পুলিশ জানিয়েছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে,চাঁদার দাবিতে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বহিস্কৃত সাবেক সহ সভাপতি এস কে সজিবের নেতৃত্ব এই হত্যাকান্ড হয়েছে।এস কে সজিবসহ পাঁচজনকে আটক করেছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অভিযানিকদল।অন্য তিনজন হলেন সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর গ্রামের জহির রায়হান ওরফে বাবু,সদরের কুমারগাড়া এলাকার ফয়সাল আহমেদ,হাউজিং এলাকার ইফতি খান। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এস কে সজীব কলেজে পড়ালেখা না করেও হঠাৎ করে ছাত্রলীগের পদ পেয়ে যান।ইয়াসির আরাফাত ও সাদ আহাম্মেদের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ২০১৭-১৮ সালের দিকে প্রথম সহ:সম্পাদকের পদ পান।তখন থেকেই শহরের হাউজিং এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরি করে এলাকায় চাঁদাবাজি,মারপিট,মাদকের কারবারসহ নানা অপকর্ম শুরু করেন।এরপরও নেতাদের সুপারিশে জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটিতে সহ:সভাপতির পদ পেয়ে যান তিনি।এরপর সজীব আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা যায়।জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলাসহ নানা অপকর্মের কারণে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তুষারের হাত ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন সজীব।সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নেন।সেখানে তাঁকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।ওই মঞ্চে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত সহ অন্য নেতারাও ছিলেন। তখন সজীব মাইকে বলতে থাকে যে,‘আগে আমি ছাত্রলীগ করতাম,এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করি।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একটি সূত্র জানায়,এস কে সজীবকে নেতারা নানা অপকর্মে ব্যবহার করেন।তাঁর ক্যাডার বাহিনী আছে। মিছিল-মিটিংয়ে কিশোরদের নিয়ে আসেন। আগে ছাত্রলীগ করলেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটিতে তুষার সভাপতি হলে আবার তাঁর ছত্রছায়ায় নানা অপকর্ম করে আসছিলেন।সর্বশেষ শুক্রবার রাতেও তুষারের সঙ্গে কুষ্টিয়া পলিটেকনিকে একসঙ্গে ছিলেন।এরপরই তাঁকে আটক করে পুলিশ।পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে,এস কে সজীবের নাম সজীব শেখ।তাঁর বাবার নাম মিলন শেখ।শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার হরিবাসর এলাকায় তাঁদের বাড়ি।সজীবের নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মাদক,চাঁদাবাজি,হামলাসহ নানা অভিযোগে পুরোনো ১৩-১৫ টি মামলা আছে।কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের মামলায় তাঁর দুই বছরের সাজাও হয়েছিল।গত বছর শহরের পিটিআই রোডে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে গুরুতর আহত করা হয়।এর আগে শহরের সাদ্দাম বাজার এলাকা এক যুবককে ছুরিকাঘাত করার সময় তিনিও গুরুতর আহত হয়েছিলেন।ওই ঘটনায় মামলাও হয়েছে।এছাড়া শহরের হাউজিং এলাকায় চাঁদাবাজি ও হামলার একাধিক ঘটনা আছে।সেই সব ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।সর্বশেষ মিলন হোসেনকে অপহরণ ও হত্যার মিশনে নেতৃত্ব দেন সজীবসহ তাঁর ৫ সহযোগী।পুলিশ সূত্রে জানা যায় যে,হাউজিং এলাকায় তাঁদের একটি কার্যালয় আছে।সেখানে লোকজনকে ধরে এনে নির্যাতন করে চাঁদা আদায় করা হয়।শহরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা আছে। নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ছবি তুলে তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন।এস কে স্বজিব কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাং-প্রধান।এস কে সজীব তাঁর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া শহরে একটি গ্যাং পরিচালনা করে।তার নামে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ১৩-১৫ টি মামলা চলমান আছে।বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করছেন এস কে স্বজিব।তবে কোনো পদ-পদবি নেই।এস কে সজীব জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাতের (তুষার) সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেন।তবে উল্লেখিত আলোচিত হত্যা মামলার সাথে ওতোপ্রোৎ ভাবে জড়িত,কিশোরগ্যাং লিডার এসকে সজিব সিন্ডিকেটের প্রধান টার্গেট ছিলো ছেলে মেয়েদের ব্লাক মেইল করে চাঁদা দাবি করা।